Thursday, July 26, 2012

সুকুমার রায়ের লজিক

লেখকঃ মিহির চক্রবর্তী
লজিকের দুটি অংশ, একটি ভাষা নিয়ে আর একটি অর্থ নিয়ে। ভাষাগত অংশের আবার দুটি উপঅংশ - বর্ণমালা, শব্দ ও বাক্যগঠনের একটি ভাগ এবং সিধান্ত নির্মাণ-প্রক্রিয়ার অন্যটি। শুধু গাঠনিক (structural) দিক দিয়ে দেখলে সিধান্ত নির্মাণ বলতে বোঝায় কতগুলি প্রাথমিক বাক্য থেকে কোনো সিমাবদ্ধ যান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অন্য একটি বাক্যে পৌছানো - যাকে বলা হয় সিদ্ধান্ত-বাক্য। এই প্রক্রিয়া একটি খেলার মত, কিছু নিয়ম মেনে নিয়ে সঞ্চলন, যে চলার কোনো অর্থ খোঁজা হয় না। সু-সিদ্ধান্ত অথবা কু-সিদ্ধান্ত হচ্ছে কিনা এই মানসূচক আলোচনা হতে পারে কোনোরকম দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহন করলে তবেই। লজিকের অর্থগত অংশ থেকে এই দৃষ্টিভঙ্গী আসে, অথবা দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই অর্থ তৈরি হয়। ক্লাসিকাল লজিক মনে করে সেই সিদ্ধান্তনির্মাণ-প্রক্রিয়াই আমরা গ্রাহ্য করব, যার ফলে সত্য প্রাথমিক বাক্যসমুহ থেকে সিদ্ধান্ত-বাক্যই শুধু উপনীত হওয়া যায়। অবশ্য 'সত্য' কাকে বলে অথবা তা সহজলভ্য বা আদৌ লভ্য কিনা তা নিয়ে বিতর্ক চলে; এ বিতর্ক কোনোদিন শেষ হবে বলে মনেও হয় না।

একটি কথা এই ক্ষনেই বলে রাখা ভালো। ক্লাসিকাল লজিকের নির্মাণ-প্রক্রিয়া এমনই যে কোন সুসংগত (consistent) প্রাথমিক-বাক্য থেকে পরস্পরবিরোধী সিদ্ধান্ত-বাক্যে পৌঁছানো যায় না। এই লজিক এবং তার উপর ভিত্তি করে তৈরি ক্লাসিকাল গণিত স্ববিরোধী সিদ্ধান্তকরনকে অর্থহীন অপক্রিয়া বলে মনে করে, বস্তুত এই পরিস্থিতিকে তারা ভয়ই করে এবং সাধ্যমত এড়িয়ে যায়। 'স্ববিরোধী সিদ্ধান্ত গঠন' এবং 'যে কোনো সিদ্ধান্তই চলতে পারে' এই দুই পরিস্থিতিকে পুরোনো লজিক সমগোত্রের মনে করে থাকে। অনেক লজিকই তা করে না। স্ববিরোধীতাকে স্বাভাবিক করে তোলা ননসেন্স রচনাশৈলীর অন্যতম রীতি।

সুকুমার রায়ের আলোচনা প্রসঙ্গে আমি মূলত তাঁর 'ননসেন্স' রচনাগুলিএ অন্তর্নিহিত 'লজিক' খোঁজারই চেষ্টা করব। সময়ের প্রেক্ষিত অথবা ন্যায়-অন্যায়, শুভ-অশুভ বিচার ইত্যাদি আমাদের পরিধির বাইরে থাকবে।

এ জাতীয় লেখাগুলির ভাষাগঠনের উপাদান প্রধানত তিনটি, প্রথমত বাংলা ভাষার প্রচলিত শব্দাবলী, দ্বিতীয়ত ছন্দ ও তৃতীয়ত ছবি। আমি ছন্দ ও ছবিকেও অন্তর্ভুক্ত করেছি কারন অনেক সময়েই তাঁর রচনার সাথে এ দুটির কোনো একটি বা কখনো দুটিই অবিচ্ছেদ্য ভাবে জড়িয়ে থাকে - এগুলি বাদ দিলে রচনাটি আর দাঁড়ায় না। তাঁর ভাষায় অভিধান বহির্ভুত কিছু নামশব্দ আছে যেগুলির নির্দেশ্য-বস্তু (referent) আমাদের পরিচিত জগতে পাওয়া যায়নি। যথাঃ কুমড়োপটাশ, বকচ্ছপ, ল্যাংড়াথেরিয়াম ইত্যাদি। এগুলিকে শুধুই নাম বলে মনে করা যেত। কিন্তু সাথে ছবি থাকায় তা করতে আমাদের বাধা আসে। 'কুমড়োপটাশ' শব্দটি আর তার সাথের ছবিটি মিলে একটা বাস্তবতার সৃষ্টি হয় যাকে এড়ানো যায় না। এমন কথা সাধারন ভাবেই বলা যায়। ঠাকুরমার ঝুলিতে ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী আর তাদের নীল নীল ছবিগুলি। অনুরুপভাবে জ্যামিতির টেক্সট-এ বৃত্তের সংজ্ঞা এবং তার চিত্র, পরশুরামের রচনায় কাষ্ঠ কৌপীন এবং তার চিত্র। চিত্র এখানে আবশ্যিক।

সেইমতোই, ছন্দ-ছাড়া হলে কিছু কিছু রচন হয়েও ওঠে না। অসংখ্যের একটি -
'হাসছি কেন কেউ জানে না, পাচ্ছে হাসি হাসছি তাই'। অথবা 'থুরথুরে বুড়ি তার ঝুরঝুরে বাড়ি'।
অসামান্য! তবু আমি হয়তো আরো একটু খুশি হতাম যদি দ্বিতীয়টি এমনি হত -
' ত্থুত্থুরে বুড়ী তার ঝুঝঝুরে বাড়ী'

সে যাই হোক। ছন্দ এখানে আবশ্যিক। যদিও আকর্ষণীয় গদ্য রচনাও আছে, তবু একথা ভেবে দেখার মতো, কেন কৌতুক সৃষ্টিতে 'অসম্ভব' ছন্দের মধ্যেই ভাষা পায়।

শব্দ-ভাষার ক্ষেত্রে মূলত অবশ্য বাংলা শব্দ ব্যবহৃত হলেও, কখনো কখনো পাওয়া যায় এরকমও
'চিমনি-চাটা ভ্যাঁপসা-মুখো ভ্যাঁপাটে।'
অথবা 'দেখবে তখন ছিম্বি ছ্যাঙা চপাটি।'

অভিধান বহির্ভুত শভগুলি, বরং বলব, ধ্বনিগুলি প্রতিবেশি শব্দ ও বাক্যবন্ধের পরিবেশে যেন বাংলা বাংলা মতো হয়ে ওঠে এবং অর্থ পায়।

এছাড়া, সুগঠিত বাংলা শব্দ দিয়েও এমন বাক্যগঠন সম্ভব যা কোন স্বাভাবিক অর্থ পাওয়া যায় না। যেমন এই বাক্যটি -

'বুদ্ধিমান ছোট বড় বৃত্তগুলি বাগবিতন্ডায় ক্লান্ত
হয়ে নিদ্রামগ্ন অবস্থায় সুগন্ধময় দিবাস্বপ্ন দেখছিল।'

এটি সুকুমার রায়ের নয়। তবে অনুরুপ বাক্য তাঁর রচনায় আকছাড় ছড়িয়ে আছে। 'হলদে সবুজ ওরাং ওটাং' স্মরনীয়। বস্তুত এমন বাক্যের নিপুন ব্যবহার তাঁর রচনার অন্যতম মূল ভিত্তি ও আকর্ষণ।

সাধারন ভাষার একটি লক্ষ্য-অর্থ (intended interpretation) থাকে। তবে মনে রাখা দরকার, এই নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়াও ওই একই ভাষার অন্য অর্থও থাকতে পারে, অথবা ঠিকমত বললে, অন্যান্য অর্থও দেওয়া যেতে পারে। আমরা অবশ্য অর্থহীন ভাষার কথাও বলে থাকি (uninterpreted language) - যা ভবিষ্যতে কোনো সম্ভাব্য অর্থ গ্রহনের জন্য অপেক্ষা করে থাকে।

মুশকিল এই যে, নাম-শব্দগুলি যদি জগৎ সংসারের কোনো বস্তু বা বিষয়কে চিহ্নিত না করে তাহলে তাদের অর্থদান হবে কিভাবে? সুকুমার রায় কেন, শুধু 'ফাঁপা-নামশব্দ' (empty term) নিয়ে আমাদের খেলা চলে আসছে আদিকাল থেকে। মনে করা যায় এই শব্দগুলি - পরী, পেগাসাস, পক্ষীরাজ, ভূত, শিব, খোক্কস অথবা যে কোনো গাণিতিক বস্তুর নাম, যেমন বৃত্ত, সরলরেখা, ১০৩৫৩৩২। এগুলি নিয়ে আমাদের কারবার দীর্ধদিনের এবং আশ্চর্যরকম অপরিহার্য। নামশব্দগুলির সাথে ছবি যুক্ত হয়ে তৈরি হয়ে ওঠে অর্থের জগৎ, যেখানে প্রকৃত কুমড়োপটাশের চলাফেরা, মান-অভিমান। একে আজগুবির বা ননসেন্সের জগৎ বলেছেন কেউ কেউ। ঠিকই। তবে যেক্ষেত্রে ভূত, খোক্কস, পরীর জগৎ তো বটেই, প্লেটোর তৈরি গাণিতিক বিশ্বও আজগুবির। 'আজগুবি' জগতের বস্তুগুলির কিছু কিছু চারিত্র্যধর্ম আরোপ করা হয়। কোনো বাক্যের সত্যাসত্য স্থির হয় বাক্যটি সেই ধর্মগুলিকেই বলে কি না তার উপর। বস্তুগুলি যেহেতু নেই, সেগুলি প্রকৃতই অনুরুপভাবে আচরন করে কি না এ প্রশ্ন অবান্তর। প্রসঙ্গত বাট্রান্ড রাসেলের নিম্নলিখিত উদ্ধৃতিটি মনে আসে -

'Mathematics is the subject in which we never know what we are talking about nor whether what we are saying is true.'

গণিত সম্পর্কেই যখন একথা, সুকুমারবাবুর দোষ কি? তাঁর নিজের কথায় -
'নামের সঙ্গে নামীর সাদৃশ্য বা সম্পর্ক যে কোথায়, তাহা আজ পর্যন্ত কেহ নির্দেশ করিতে পারে নাই।' (ভাষার অত্যাচার)

অর্থাৎ ঠিক কোন নিয়মে দুজন নাম ব্যবহারকারী একই নামী-কে সম্পর্কিত করে ফেলেন, তা এখনও অস্পষ্ট। তাই বকচ্ছপের ছবি এঁকে দিতে হয়। তার পরেও একই কথার ঠিক ঠিক একই অর্থোপলব্ধি হয় কিনা বলা যায় না। তবু চেষ্টা করা হতে থাকে। কারণ 'একই কথার অর্থ তোমার আমার কাছে একরকম আর অন্য দশজনের কাছে অন্যরকম এরুপ ঘটিলে ভাষার উদ্দেশ্যই পন্ড হইয়া যায়।' ( ভাষার অত্যাচার ) তাহলে সুকুমার রায়ের আশঙ্কা কাব্য বা ইতিহাস বা বৈজ্ঞানিক গবেষনা একাকার হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। (এখানকার একটু পূর্ণতাপ্রাপ্ত পাঠক ভেবে দেখবেন রামায়ন বা মহাভারতের কাছে আমাদের আশা ঠিক কি এরকমই নয় কি? একই সাথে কাব্য ইতিহাস সমাজবিজ্ঞান।) এত সবের পরেও তিনি লেখেন -'আয়রে ভোলা খেয়াল খোলা' এবং 'আয়রে তবে ভুলের ভবে অসম্ভবের ছন্দেতে।' অসম্ভবও চাই, ছন্দও চাই। আমাদের একজন বন্ধু সুকুমার রায় প্রসঙ্গে সম্প্রতি লিখেছেন - 'শব্দের যেখানে সীমান্ত, তার ওপারে নিশঃব্দ। এই সীমান্ত রেখার গায়ে-গায়ে যে-প্রলম্বিত মধ্যভূমি, সেখানেই নিরর্থের ( ননসেন্সে-এর ) এক্তিয়ার।' সুকুমার রায়ের মধ্যে দুটি ঝোঁকই ছিল বলে মনে হয় - শব্দের সুনির্দিষ্ট অর্থকরন, আবার অর্থের হাত থেকে মুক্তি যাকে একধরনের নৈঃশব্দ্যও বলা চলে। এই দ্বন্দই আমার কাছে স্বাভাবিক লাগে।

এবারে তাঁর সিদ্ধান্ত-নির্মাণের প্রক্রিয়া। যেহেতু ডিম থেকে হাঁস হামেশাই হয়, সেহেতু রুমাল থেকে বেড়াল। এতে আশ্চর্য হবার কি আছে?

এই সিদ্ধান্ত-পদ্ধতিকে analogical শ্রেণীভুক্ত করা যায়, সাদৃশ্যের উপর নির্ভর করে যে পদ্ধতিতে চলন সম্ভব হয়। তবে উপভোগ্য কৌতুকটুকু বাড়তি। ঠিক একই লজিক-এ স্বীকার করে নেওয়া যায় - ফুল ফোটার শব্দ, চাঁদ ডোবা আর বুক ফাটার শব্দ। কৌতুক আর ঘন হয় যখন সেই অনুরুপতা আরো একধাপ এগোয়। ফুল ফোটার শব্দ - ঠাস ঠাস, দ্রুম দ্রাম, পটকা ফাটার মতো। চাঁদ ডোবার শব্দ - গব গব গবাস্‌। এভাবেই গ্রহনযোগ্য হয় তেত ছায়া-নিমগাছের, মিষ্টি ছায়া-মৌয়াগাছের এবং ব্লটিং পেপার দিয়ে তা শুষে নিতেও বাধা হয় না। এই সিদ্ধান্ত-পদ্ধতির মজা এখানেই যে, সামান্য একটু সাদৃশ্য বা সমাপতন থাকলেই পরবর্তি বাক্যে উপনীত হওয়া চলে অনায়াসে। হযবরল-র সমালোচনা প্রসঙ্গে একসময় বলা হয়েছিল -

'ছোট ছেলেদের এক চিন্তা আর এক চিন্তা হইতে লাফাইয়া লাফাইয়া চলে - তাহাদের ক্ষীণ যে যোগসুত্র থাকে তাহা সবসময় ধরিতে পারা যায় না।' ( প্রবাসী )

আমার তো মনে হয় ক্ষীণতম যোগসুত্র নির্ভর লাফিয়ে চলার এই মানসিক গঠনকর্মে ( mental construction )এ 'বড়'রাও কম দক্ষ বা উৎসুক নন - বাংলার আকাশে বর্ষা বা শরতের মেঘ ভেসে যাওয়া দেখতে দেখতে কোন সে মানুষ যে এই বিচরণ শেখেনি?

দ্বিতীয়ত আত্ম-অস্বীকৃতি (self denial) এক অর্থে আত্মবঞ্চনা। লজিকের এই চিরাচরিত সমস্যাগুলির কথা মনে আসে - যখন একজন ক্রীটদেশীয় বলেন, 'সকল ক্রীটবাসী মিথ্যাবাদী' তখন তিনি সত্যি বলেন না মিথ্যা? অথবা গ্যেডেল যখন প্রমান করেন - কোনো একটি সিস্টেম যদি সুসঙ্গত (consistent) হয়, তাহলে সে কখনই নিজের সুসঙ্গতি প্রমান করতে পারবে না। এইরকম সিদ্ধান্তগঠন প্রক্রিয়ার খুব আকর্ষনিয় নিদর্শন 'লড়াইক্ষ্যাপা'। নোটবইতে পাগলা জগাই লিখেছে -

'- শোনরে জগাই, ভীষন লড়াই হলো
পাঁচ ব্যাটাকে খতম ক'রে জগাই দাদা মোলো।'

জগাই জগাইকে জগাইয়ের মৃত্যুর কাহিনী বলছে।

একটু কম দাবিতে যদি আমরা সন্তুষ্ট হই তাহলে 'খুড়োর কল' অথবা 'বাবুরাম সাপুড়ে'। গদ্য রচনায় এমন উদাহরন 'বাজে গল্প - ১'।

'সেই হইতে দুজনের ছাড়াছাড়ি। কালা বলে - অন্ধটা এমন
জুয়াচোর সে দিনকে রাত করিতে পারে।
অন্ধ বলে - কালাটা যদি নিজের কথা শুনিতে পাইত তবে
বুঝিত সে কত বড় মিথ্যাবাদি।'

এভাবে, আত্ম-অস্বীকৃতি দিয়ে রহস্যময় কূটাভাস (paradox) তৈরি করা বহুকাল ধরে প্রচলিত, এই ক্ষেত্রে তার সাথে যুক্ত হয়েছে কৌতুক। কেন এই কৌতুকের জন্ম হয় একথা কে বলবেন, কবি, শিল্পী না সাইকোলজিস্ট? কেন কারো পতনে কারুন্যের বদলে হাস্যের উদ্রেক হয়?

কেউ কেউ সুকুমার রায়ের রচনা প্রসঙ্গে বলেছেন - 'খাঁটি আজগুবির জগতে যুক্তিহীনতা ও অপ্রাসঙ্গিকতার একছত্র রাজত্ব।' আমার মনে হয় ঠিক তা নয়। আমাদের সামান্য একটু কিছু মেনে নিয়ে শুরু করতে হয়। (axiom এর মতো)। এগুলি প্রকৃত তথ্য থেকে আসতেই হবে, এমন নয়। কল্পনা বা সংস্কার থেকেও হতে পারে - যেমন রুপকথায়, (আহা! কী আশ্চর্য শব্দগুচ্ছটি রুপ-কথা, রুপ গড়ে নিয়ে তার কথা বলা) তারপর থেকে তা নিজের টানে চলে। এই টানের স্বরুপ খুঁজে পাওয়া শক্ত। অর্থাৎ কী একটু অন্যরকম হলে খেয়াল রস ব্যাহত হত? এই টানটা কি শুধু অসম্ভব বস্তু সামগ্রীর মধ্যেই শুধু? না কি ঐ সামগ্রী আর তাদের শ্রোতা-দর্শক-পাঠক মিলিয়ে মিশিয়ে তৈরি হয়? বাঙালী ছাড়া কি আবোলতাবোল সার্থকতা পাবে? অথচ অত্যন্তই আধুনিক এই সৃষ্টিকর্ম; সেই অর্থে পশ্চিমী মনন আর বৈজ্ঞানিক সংস্কৃতির ফসল।

আমরা এখন একটি মাত্র এরিস্টটলিয়ান লজিক নিয়ে আর সন্তুষ্ট নই।

'In logic there are no morals. Everyone is at liberty to build up his own logic, his own form of language.' (Carnap 1949)

এমন কি আমরা আংশিক সংগতি বা অসংগতির লগিক নিয়েও কথা বলি। সুকুমার চাইছিলেন -

বিড়াল যদি হয় রুমাল-এর লজিক

সামান্য একটু সাজিয়ে নিলেই

হ য ব র ল

এই আর কি!

লজিকের কথা এই পর্যন্ত। একটু পরা-লজিক এবার। কেউ মনে করেন - অর্থ নয় অর্থহীণতাই এর (সুকুমার রায়ের লেখার) উপজীব্য। তা কোনো নৈতিক বা সামাজিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত নয়। কেউ বলেন শব্দ থেকে নিষ্ক্রমন নয়, শব্দকে আক্রমন - নিরর্থক শব্দের বিরুদ্ধে সহাস্য জেহাদ - এইটেই হল তার প্রধান লক্ষ্য। তাঁর সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী এই উক্তি হওয়াটা বিচিত্র নয়।

অর্থ নিয়ে দ্বিচারিতা আমরা দেখেছি। অসংলগ্নতা নিয়ে এত মজাদার খেলা করেও সংগতির যুপকাষ্ঠে (স্বার্থে) হ য ব র ল রচনাটি শেষ পর্যন্ত শুধু একটি স্বপ্ন দেখা হিসেবেই থাকে। এ সংগতি রক্ষার কি কোন প্রয়োজন ছিল? এই বিরোধী সত্তাই কি 'নই আমি কিচ্ছু'তে পরিণতি পায় বা 'তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম'-এ, যা কমবেশি আমরা সকলেই?

এ তো সেই আদ্যিকালের বোধোদয়। এখানেও ইডিওলজি। আরো সিরিয়াস ননসেন্সের জগতে হয়তো পা বাড়াচ্ছিলেন তিনি। তাঁর নিজেরই কথায় 'সিরিয়স ইন্টারেস্ট ইন লাইফ'। কিন্তু জীবন শেষ হল একটু অসময়ে।

সমাপ্ত