Thursday, January 13, 2011

অনির্বান–১

শিল্পীঃ নচিকেতা

অনির্বান আমার বন্ধু, অনির্বানের সাথে যখন আমার দ্বিতীয়বার দেখা হয়েছিলো তখন সময়টা ছিলো বড় অদ্ভুত। আমরা হাইওয়ের উপর দিয়ে অনেকদুরে একটা অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছি, লাল আকাশ, সন্ধ্যে হয়ে আসছে, দু’পাশে ফাঁকা মাঠ। আমরা চা খাবো বলে গাড়িটা দাড় করিয়েছি একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত চায়ের দোকানে। এমন সময় দেখতে পেলাম লাল আকাশকে পেছনে রেখে-একটা ছেলে মাঠ পার হয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বললো–চিনতে পারছিস? আমি বললাম–না! বললো–ভালো করে দেখ। আমি সেই চুরি যাওয়া আলোতে ওকে চিনলাম, আমার বন্ধু অনির্বান। আমার চোখের সামনে পুরোনো দিনগুলো ছায়াছবির মত ভেসে উঠছে। আমি ওকে প্রশ্ন করলাম–অনির্বান, তুই এখানে!! ও বললো–তাইতো কথা ছিলো বন্ধু, আমাদের তো এখানেই থাকার কথা ছিলো। আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। আমি খুব বোকার মত ওকে প্রশ্ন করলাম– অনির্বান কি করছিস এখন? ও বললো–যা কথা ছিলো বন্ধু, মানুষের মাঝখানেই আছি। আমি আর দাড়িয়ে থাকতে পারছিনা, একটা অপরাধবোধ আমাকে গ্রাস করছে। ও বললো–তোর দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি গাড়িতে গিয়ে বসলাম। ও জানলার কাছে এসে বললো–এখন তো তোর নাম হয়ে গেছে, তুইতো বিখ্যাত হয়ে গেছিস! সুখেই আছিস কি বল! আমার গাড়ি স্টার্ট নিয়ে নিয়েছে, অনির্বান আমার জীবন থেকে মিলিয়ে যাচ্ছে…অনির্বানের শেষ কথা গুলো আজও আমার কানে আলপিনের মত বেঁধে–
সুখেই আছিস…সুখেই আছিস………

দেখে যা, যা অনির্বান
কি সুখে রয়েছে প্রান-
দেখে যা, যা অনির্বান
কি সুখে রয়েছে প্রান
কি সুখে রয়েছি আমি
কি সুখে বেচেছি গান
দেখে যা, যা অনির্বান
কি সুখে রয়েছে প্রান।

সেদিনের মিটিঙের মাইক
সেদিনের কলেজের স্ট্রাইক
সেদিনের মাতাল পদক্ষেপ
বে-দিক সিদ্ধান্তের আক্ষেপ
আজ কেঁদে এই মাপা পদচারন
সেদিনের তালের কাছে ম্লান
দেখে যা, যা অনির্বান
কি সুখে রয়েছে প্রান-
দেখে যা, যা অনির্বান
কি সুখে রয়েছে প্রান।

শ্রমিকের মুক্তির গান
কৃষকের হাতিয়ার শান
শ্রেনীহীন সমাজের স্বপ্ন
ঘৃনার প্রতিপালনেতে যত্ন
আজ তোর ঘামে ভেজে যে পথের ধূলো
হয়তো সেথায় আমার হতো স্থান
দেখে যা, যা অনির্বান
কি সুখে রয়েছে প্রান-
দেখে যা, যা অনির্বান
কি সুখে রয়েছে প্রান।
কি সুখে রয়েছি আমি
কি সুখে বেচেছি গান
দেখে যা, যা অনির্বান
কি সুখে রয়েছে প্রান-
দেখে যা, যা অনির্বান
কি সুখে রয়েছে প্রান।

সমাপ্ত