Thursday, July 26, 2012

মধুচক্র

লেখকঃ সুব্রত মন্ডল
এক
স্বাতী মিত্র জ্বালিয়ে যাচ্ছে। অপরাধ আমার দুর্বলতা। কোনও এক নরম সন্ধ্যায় হৃদয় উজাড় করে পিরিতির কাব্যকথা। তারপর খুনসুটি। এরপর যা হয়ে থাকে তা-ই হল।
স্বাতীর ফ্লাট থেকে নামার সময় দু-চারটে দৃষ্টিবাণ বেশ অনুভব করি। ওর অতিথিরা আশা হাউসিং-এ আদৃত নন। এটা নতুন কিছু নয়। এখন সব হাউসিং-এই একাকী মহিলা, ডিভোর্সী দু-চারজন থাকেন। যাঁদের প্রতিটি পদিক্ষেপই ক্যামেরায় ধরা। অদ্ভুত নব্য সভ্যতায় সমৃদ্ধ এই বহুতল কালচার। প্রমোটার, সরকারি চাকুরে, অধ্যাপক, কালোবাজারি, দুঁদে রাজনীতিকের সাম্যবাদি সহাবস্থান। অতীতকে ফেলে এসে নতুন জীবন। কিছু লাভ, কিছু লোকসান। সবাই একই সঙ্গে দৌড় আরম্ভ করেছে। অচেনা দৌড়বীরেরা অজানা জীবনপঞ্জির ওপর অহেতুক সম্ভ্রম আছে। সম্পর্কের শীতলতা কাটাতে প্রথম প্রজন্ম কেটে যায়। এরই মধ্যে কিছু একাকিনী আছেন, আলোচনা আর কৌতূহলের বিষয়বস্তু হয়ে।

বিনা ছাতায় ভিজতে হয়। একাকিনী মহিলা প্রতিপদে হোঁচট খান। জিজ্ঞাসু দৃষ্টি বা দৃষ্টিতারল্যে। মিসেস মিত্র এসব মানিয়ে নিয়েছেন। এখন ত্রিশ। সুর্য সবে মাঝ গগনে। পশ্চিমে হেলতে অনেক দেরি। বিবাহবিচ্ছেদের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে আত্ম-সন্মোহনে। উচিত-অনুচিত, অভাব-প্রাপ্তি, অনেক অনুভুতির ঐক্যতানে। ইতিহাস, বর্তমানের অর্থ, ভবিষ্যতের লক্ষ্য স্থির করার সময় যখন এল, জীবন অনেক সমস্যার জটিল পাটিগনিত। পার্থ প্রথম ক মাস খোরপোশ দিয়েছে, আদালতের নির্দেশ মতো। পরে অনিয়মিত। এখন একদম বন্ধ। বাবা সরকারি চাকুরে ছিলেন। স্নেহশীল পিতা। মেয়েকে তিনতলার ফ্ল্যাট দিয়ে গেছেন। ছেলেকে বঞ্চিত করে। মেয়ের বিয়ের চেষ্টাও করেছেন। কাগজের বিজ্ঞাপনে উত্তর এল, কয়েকজন বছর পঞ্চাশের প্রৌঢ়, আর একজনের বয়স বছর পঁচিশ। মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। লিভ টুগেদার চায়। মেয়ের মুখের হাসি আর দেখা হল না। স্বাতী এখন একা। অনেকজনের মধ্যে একা।

স্বাতীর ফ্ল্যাটের উল্টো দিকে আছেন মিসেস পলি গুহ। তিন-এর বি। স্বামী আয়কর বিভাগে উঁচু পদে কাজ করেন। এই চল্লিশেও মিসেসের গালের লালিমা দেখে সংসারের প্রাচুর্য বোঝা যায়। ওঁর সঙ্গে স্বাতীর সম্পর্ক অনেকটা ভালোবাসা আর ঘৃণার। ডিভোর্সের পর মিসেস গুহ অনেক সাহস জুগিয়েছেন। হালছাড়া ডিঙার বিপদ। পুরুষের প্রয়োজন। প্রতিবেশীদের কেচ্ছা কাহিনি। বিবেক গুহও আইনি পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু জীবন আইনের ধারা উপধারা নয়। কত অচেনা বন্দর বেয়ে একই জল বয়ে যায়। রং বদলায়, গতি বদলায়। এটা বুঝতে স্বাতীর মাত্র কয়েক মাস লেগেছে। তাকে আবার মামলা করতে হয়েছে। মাসোহারার জন্য। কদিন পরেই সে বুঝেছিল, ব্যাপারটা এত সহজ নয়। আইন শুভঙ্করীর চেয়েও জটিল। চাহিদার অনুভুতি নানা বাঁকের ধাক্কায় গতিহীন। ঘোলা জল। সময় এগিয়েছে। ঘৃণা নিস্তেজ। আদালতে সিলিং ফ্যান খটখট আওয়াজে ঘোরে। অথচ তার কোনও বিরক্তি নেই। পার্থকে দেখেও ঘৃনা নেই। অনুভুতি নেই। এই মানুষটাকেই দিনের পর দিন দেহ দিয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মে। কিন্তু এখন যেন ফ্রেমে আঁটা ছবি। তিনকাল একই সুরে বাঁধা তান। ডিভোর্স এত যন্ত্রনাময়। পদক্ষেপ এত যন্ত্রনাবিদ্ধ।

এখন পরিস্কার সে আর খোরপোশ পাবে না। পার্থ যতবার বন্ধ করবে, ততবার তাকে আদালতে ছুটতে হবে। যা সম্ভব নয়। অর্থ প্রয়োজন। কিন্তু এত প্রয়োজন আগে বোঝেনি। কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে চাকরির আবেদনও করেছে। সাধারন স্নাতক। অভিজ্ঞতা নেই। পেশাদারি শিক্ষা নেই। কদিন বাদেই বুঝেছে ভদ্র চাকরি সম্ভব নয়। দেহদানের অঙ্গীকারের বদলে চাকরি। গদির বেওসায়ি, দোকানের মালিক, বোদ্ধা প্রকাশক, এ ব্যাপারে সবাই সাম্যবাদী। তুমি ডিভোর্সি, আমার অর্থ আছে। দরকার নম্র সহচরী। চুক্তি অলিখিত।

বিবেক গুহ স্ত্রীর চোখ বাঁচিয়ে যতটা সম্ভব ততটা সহানুভুতিশীল। অত্যন্ত ভদ্র পরিশীলিত মানুষের কাছে যতটা ভদ্রতা আশা করা যায়। অহেতুক কৌতুহল নয়, অথচ কিছু একটা করা দরকার। এই দুই-এর দন্দ্বে তিনি যে ভুগছেন, স্বাতী নারীসুলভ ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের বেতারে বুঝতে পারে। বুঝতে পারে প্রয়োজনে ওঁর সাহায্যও দরকার। আর তা বিনামুল্যে নয়। স্বাতীর যথেষ্ট আত্মসম্মান আছে, সে অহেতুক কৃতজ্ঞতাবোধের পীড়নে জীবনকে আর জটিল করতে চায় না। সেদিন বিনা নোটিসে বিবেকবাবু কলিং বেল বাজালেন। বিনা কারনে তৈরি করা অছিলায়। মিসেস দুপুরে কোথায় যেন বেরিয়েছেন। সময় কাটছে না। তাছাড়া মামলা সম্বন্ধে জরুরি কিছু আলোচনাও আছে। স্বাতীকে জানানো দরকার। একাকিনী মহিলা নিতান্তই অসহায়। যত দিন যাচ্ছে স্বাতীর হিতাকাঙ্ক্ষী বাড়ছে। হাউসিং-এর সেক্রেটারি, ডাক্তারবাবু, চারতলার মেধাবী ছাত্র স্বপন। বিবেকবাবু আর একটু কাছের মানুষ। দির্ঘদিন আইনি পরামর্শ দেবার সুবাদে কিছুটা হকও বোধহয় জন্মেছে। সোফায় বসতে বসতে অভিভাবকসুলভ ভঙ্গিতে বললেন, কী ঠিক করলেন মিসেস মিত্র?

মামলা করে কোনও লাভ নেই।

তার মানে তো রাস্কেলটাকে ছেড়ে দেওয়া।

ছেড়ে তো অনেকদিনই দিয়েছি।

কিন্তু আপনার কি হবে?

আমি ভাবতে পারছি না। যা হবার তা-ই হবে। আমি তো আটকাতে পারব না।

এরকম একটা লম্পটকে ছেড়ে দেওয়া নৈতিক অপরাধ। তাছাড়া তোমার সারাটা জীবন পড়ে আছে। একটু ভেবে দেখো।

তুমি সম্বোধনে স্বাতী অবাক হয়না। বাঘবন্দির খেলায় এরকমই হয়। প্রত্যাশিত। প্রথমে ভদ্রতা। পরে অন্তরঙ্গ অনুসঙ্গ। আরও পরে খাদ্য ও খাদক। তার একটা ছাতা দরকার। এখানে ছুতমার্গ গৌণ। প্রথম প্রয়োজন নিরাপত্তা পরে অর্থ।

স্বাতী প্রয়োজনের অতিরিক্ত আবেগে বলে, বিবেক আমায় ডিচ্‌ কোরো না। আমি বড় অসহায়। ঘন বৈশাখে চোখে জল আসে।

মিস্টার গুহর অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা যেন ধাক্কা খায়। বিবেকে সূক্ষ্ম দংশন অনুভব করেন। স্ত্রীর আসতে এখনও ঘন্টা তিনেক দেরি। এর মধ্যে কি হতে পারে। কল্পনার চরমে ভূমিকম্প, কাল-বৈশাখী। তিনি কিশোর প্রেমিকের মত স্বাতীর হাত ধরেন। স্বাতী কেঁপে ওঠে। যেন প্রথম প্রেমিকের স্পর্শনিবিড় ছোঁয়া। তিন মাস ইলেক্ট্রিকের বিল বাকি। সবুজ বিল এসেছে। রান্নার গ্যাস ফুরিয়েছে। কিনে খেতে হচ্ছে। সংসারে খুঁটিনাটি প্রয়োজন। ও এখন অসম্ভব শীতল। মস্তিস্কের সব বার্তাকে অনুভুতির দরজায় থামিয়ে দেয়। দৃষ্টি সহজ। বার্তাবহ। আরও কাছে আসে।

মিলনের পর মিঃগুহ সিগারেট ধরান। আর এক ঘন্টা চুরি করা সময় আছে। ফ্ল্যাটে গিয়ে চান করতে হবে। ভালোবাসাহীন মিলনের শেষে স্বাভাবিক নিয়মেই ঘৃনা আসে। গভীরে মহিলা মেয়েমানুষ হয়। এটা না হলেই বোধহয় ভালো ছিল। একই ছাদের তলায় মুখোমুখি ফ্ল্যাট। দিনে দুবার দেখা হয়। স্ত্রীর বান্ধবী। জনান্তিকে মেয়েছেলে। দাম্পত্য কলহে গৃহিণি মাঝে মাঝে এই কাব্যিক বিশেষণটি ব্যবহার করেন। সাময়িক হঠকারিতায় সুদুর ফল কি হতে পারে চোখ বুজে চিন্তা করেন। এই মুহুর্তে স্বাতীকে মেয়েছেলে মনে হয় না। বরং নারী শরীরের মৃদু গ্রন্থিসুবাস আবেশ অনুঘটকের কাজ করে। তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের কিছু যুক্তি খাড়া করেন। স্বাতীর অর্থের প্রয়োজন। তিনি নেহাতই দাবার ঘোড়া। তাঁর আর্থিক সঙ্গতি আছে। এখনও অশ্বের পেশি আছে। কিছু অলিখিত কর্ত্যবোধও আছে।

মিষ্টার গুহ দাঁড়িয়ে পড়েন। স্বাতী চোখ বোজে শুয়ে। হালকা নিশ্বাস। কিছুটা নিশ্চিন্ত প্রশস্তি। হালকা হাসির ছোঁয়া। তিনি পকেট থেকে কয়েকটা একশো টাকার নোট বের করেন। খুব সবধানে গুঁজে দেন বালিশের তলায়।

দুই
আমার সঙ্গে স্বাতীর আলাপ নাটকের রিহের্সালে। অফিস ক্লাবের বাৎসরিক নাটকের মহড়ায়। বিবেকদা হাত ধরে আনলেন। ওঁর হাউসিং-এ থাকে। কলেজে নাটকের অভিজ্ঞতা আছে। এখন টুকটাক কল পেলে শো করে। আমার দেখেই পছন্দ হয়ে গেল। নায়িকার চরিত্রে বেশ মানিয়ে যাবে। মিটিং-এ তা-ই বললাম পরিচালক হিসাবে। কিন্তু স্বপ্নেও ভাবিনি স্বাতীর সাথে এভাবে জড়িয়ে পড়ব। এটা ছিল বিবেকদার অত্যন্ত উচ্চস্তরের চাল। আসলে তিনি মুক্তি চাইছিলেন। পরকিয়া বন্ধন থেকে। এটা বুঝতে অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। কিছু ন্যাকামি। কিছু কাব্যকথা। এই নিয়ে স্বাতী পর্ব। যখন পুরো ব্যাপারটা বুঝলাম, তখন অনেক সুতো ছেড়ে দিয়েছি। এখন হাউসিং-এর সবাই জানে আমি স্বাতীর বিশেষ বন্ধু। আড়ালে বাবু। অথচ আমি স্বাভাবিক জৈবিক নিয়মেই কাছে গেছি। পরে হৃদয় এগিয়ে আসে। দেহকে ছাপিয়ে অন্তরে গুনগুনানি। কার যে কখন কাকে ভালো লাগে।

আমি শৈবাল পাঠক। আর পাঁচজন বাঙালি ছেলের মতো স্নাতক। পরীক্ষা দিয়ে আয়কর বিভাগে চাকরি। অবসরে ছোটখাট মেরামতির কাজ করি। ইলেক্ট্রনিক্স জিনিসের। অনেকটা নেশা। বিবেকদার সূক্ষ্ম চালটা বুঝতে অনেকটা দেরি হয়ে গেল। যখন বুঝলাম স্বাতী হাফ-গেরস্ত তখন আমি দ্বিধা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া মাকড়সার জালে মৌমাছি। ভালোবাসা বিপদ জানে না। দোষ দেখে না। স্বাতীর ভালোবাসার মৌচাকে আমিই প্রধান কর্মী। বাকিরা নেহাতই শ্রমিক। গনিকার বাঁধা বাবুর মতো। সূক্ষ্ম আত্মতৃপ্তিতে ভুগছিলাম। মামুলি খদ্দের নয়। বাবু। মাইনের অর্ধেক টাকা গলে যায়। দিন দিন চাপ বাড়ছে। বিবেকদার সঙ্গে মাঝে মাঝে মুখোমুখি হয়। মুচকি হাসির ব্যঞ্জনায় বুঝিয়ে দেন, কেমন দিলাম।

আমি অন্ধ। স্বাতীর কোনও বিশেষ বন্ধু ঘরে থাকলে, বারান্দায় বসে আমি তারা গুনি। এক একদিন ও পুরোপুরি আমার অধিকারে থাকে। মোবাইলের সুইচ অফ্‌। ঘর অন্ধকার। যেন সত্যিকারের প্রেমিকা। চুলে নীরবে বিলি কাটে। ঘুমন্ত গলায় বলে, শৈবাল, তুমি আমায় ভালোবাসো?

আমি জবাব দিই না। স্বাতী ভাঙা-ভাঙা সুরে বলে, খুউব? আমি সুখের সাগরে ভাসি। ক্লান্তিহীন এক বর্ষন সন্ধ্যায় জলে ভিজি। অনেক ভিজি।

স্বাতী আধো আধো গলায় বলে, শৈবাল আমাকে একপাতা টিপ কিনে দেবে, লাল টিপ।

আমার মনে হয় স্বাতী আমাকে ভালোবাসে। খুউব ভালোবাসে। এ মুহুর্তে চাইলে আমি হৃদপিন্ড উপড়ে দিতে পারি। বিবাহিত জীবনের চক্রব্যূহের বাইরে স্বাতী নামের মরীচিকা বা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কেরানি জীবনের প্রাপ্তির উল্লাস আমাকে নিয়ে যায় সেই বন্ধ্যা দ্বীপে, ঘুমন্ত এক আগ্নেয়গিরি। আবার শুনি, এই নির্জন সন্ধ্যায় এক টুকরো টিপ পরিয়ে দাও ওর কপালে। চুমু খাও ওর মেঘমালা চুলে।

স্বাতী বহুচারিনী, আমার কাছে সে অস্বীকার করে না। ওর দেহ বিকিকিনি অস্বীকার করে না। ওর বুভুক্ষা, সংসারের খুঁটিনাটি সবই আমার জানা। পুরুষের হৃদয়হীনতার কথা, অস্থির কামনার কথা আমার অজানা নয়।

কয়েক বছরের যৌন শ্রমে ও অনেক পাল্টে গেছে। মুখের কমনিয়তায় এসেছে এক অদ্ভুত রঙ্গিণী রূপ। দুটি ভুরু দুরকম কথা বলে। তবু সেই শুনশান সন্ধ্যায় স্বাতীকে মনে হয় কঠিন গাছের বুকে জড়িয়ে ধরা এক মালতি লতা। নির্ভরতা আর বিশ্বাস।

স্বাতী স্বপ্ন ছোঁয়ায় বলে, আমার ভার নেবে? শুধু তুমি আর আমি। আমরা চলে যাব অনেক দুরে।

তা কি করে হয়। আমার সরকারি চাকরি, সংসার।

কেন হয় না? আমার জমানো কিছু টাকা আছে। এই শরীরটা বেচে জমিয়েছি। তুমি একটা ব্যবসা করবে। কেউ আমাদের চিনবে না।

আমি চুপ করে থাকি। যে প্রশ্নের জবাব হয় না তার জবাব দিই কি করে?

স্বাতী খিলখিল করে ছেনাল হাসি হাসে, মুরোদ বোঝা গেছে। কাজের বেলা যত পিরিতি।

মাথা দপদপ করে। বিছানা থেকে উঠে পড়ি। শরীরে এখনও স্বাতীর গন্ধ। জামাটা গলিয়ে নিই। স্বাতী মুচকি হাসে। বলে তুমি আমার ভার নাও। আমি পাশে থাকব সারাটা জীবন।

একটা সূক্ষ্ম অপরাধবোধ কাজ করে, স্বাতীকে ব্যবহার করার জন্য। মিলনের উত্তাপ না ভালোবাসা না কি দুইই। নিস্তরঙ্গ জীবনে একটু ঝড়ের সন্ধান? নাকি ভাদ্র মাসে সারমেয়সুলভ রিরংসা। তবু মনে হয় স্বাতীর অদর্শনে সন্ধ্যামালতির গন্ধ পাই। বড় অসহায়। হৃদপিন্ডের খাঁচাটা বড় ছোট হয়ে আসে।

তিন
বিবেকদা আমাকে সাবধান করেন, কেটে পড়ো, ওমুখো হোয়ো না, তলিয়ে যাবে, ওনাসিসের জাহাজ ডুবেছিল, তুমি তো পাতি কেরানি। বিবেকদাকে আমার ভাঁড় মনে হয়। যাত্রা আসরের মোটা রসের ভাঁড়। রসেবশে জীবন ভরপুর। এখন পুরুত মশাইয়ের চরিত্রে নেমেছেন। অনেকদিন বৌদির সাথে মুখোমুখি দেখা হয়েছে। চোখে ক্রোধ আর ঘৃনা। অবচেতন মনে আনন্দও আছে। মুক্তির আনন্দ। ছেনালটা স্বামীকে বশ করতে পারেনি, পেরেছে তার অধস্তন মোরগকে। এই জেতার আনন্দ তাকে ঘৃনা করতে শিখিয়েছে। কয়েকদিন আগে বিবেকদার মুখে শুনলাম, উনি নাকি দল পাকাচ্ছেন। বলে বেড়াচ্ছে মধুচক্রের কথা। হাউসিং-এর নৈতিক অধঃপতন নিয়ে চিন্তিত। গৃহিণীরা কর্তাদের চোখে চোখে রাখছে, সেক্রেটারির স্ত্রী নাকি একজন প্রাইভেট আড়কাঠিকেও লাগিয়েছে। আবহাওয়া উত্তপ্ত। বিস্ফোরনের অপেক্ষায়।

বিবেকদার ফ্ল্যাটে অফিসিয়াল সভা ডাকা হয়েছে। সমর কৌশল ঠিক করার জন্য। কিন্তু সেক্রেটারি সমরবাবুর ভেটো নিক্ষেপে কিছু করা গেল না। উনি ব্যাপারটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেন। বলেন, ভদ্র মহিলা অসহায়। সামান্য প্রসাধনির ব্যবসা করেন। লোকজন আসে। গুহ গিন্নি রাগত স্বরে বলেন, প্রসাধনির ব্যবসা না দেহ ব্যবসা? উনি সমরবাবুর অহেতুক দুর্বলতার ব্যাপারটা জানেন।

আপনি তো প্রায়ই চা খেতে যান, কিছু দেখেননি?

সমরবাবু পোড় খাওয়া ঠিকাদার। জীবনকে অনেক কাছ থেকে দেখেছেন। ব্যবসার খাতিরে তাঁর রঙ্গিণীদের প্রয়োজন। স্বাতীকেও দু-একবার পাঠিয়েছেন। উচ্চ প্রশংসা মিলেছে। তিনি স্বাতীর কাছে কৃতজ্ঞ। সামনেই সড়ক নির্মাণের টেন্ডার বেরোচ্ছে। প্রায় পাঁচ কোটি টাকার কাজ। চিফ ইঞ্জিনিয়ার পুরোপুরি আমিষ পছন্দ করেন। আর কোন জাগতিক পদার্থে তার মোহ নেই। এতৎ অবস্থায় তিনি স্বাতীর মতো হরিণীকে কী করে এতগুলো হিংস্র হায়নার কাছে ছেড়ে দেন? তিনি বিবেকবাবুকেও দু-একবার চায়ের আসরে দেখেছেন। মুখোমুখি হয়েছেন। দুজনেই দুজনকে অর্থবোধক হাসিতে কুর্নিশ করেছেন। তারপর থেকে একটা অলিখিত নিয়ম রক্ষা করে চলেছেন। উভয়েই। তিনি সকালে বাজার থেকে ফেরার পথে এদিক ওদিক চেয়ে স্বাতীর ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়েন। আর বিবেকদা চা-এর পেয়ালায় চুমুক দেন সন্ধ্যার আলো আধাঁরিতে। এই বিনা পয়সার পিরিতি স্বাতীর অসহ্য লাগে। কিন্তু উপায় নেই। তাকে মানতেই হয়, আনুষাঙ্গিক ব্যবসার ঝামেলার মতো। স্বাতী অবশ্য কৃতজ্ঞ এ দুজন মানুষের কাছে। এদের অদৃশ্য বরাভয় না থাকলে স্বাতীকে কবে রং মেখে ধর্মতলায় দাঁড়াতে হত।

গুহ গিন্নির সতীপনায় সমরবাবু ব্যথিত হন। সঙ্গে আবার কর্তা সঙ্গত করছে। লোকটার এতটুকু বিবেকবোধ নেই। ঝড় যে আসছে তিনি বুঝতে পারছেন। তিনি দুরদর্শী। অহেতুক ফালতু ব্যাপারে যান না। তার মধ্যে দার্শনিক ব্যাপার স্যাপার নেই। কিন্তু উপকারীর মুল্য বোঝেন। কী করে ঝড় সামলাবেন মনে মনে আঁক কষেন। সেক্রেটারি হিসাবে তার কর্তব্যবোধও আছে। বেশির ভাগ মেম্বারই ছাপোষা। দু-চারজনের মাসিক বিল কয়েক মাস বাকি। এঁরা সাধারনত মিটিং-এ আসেন না। এঁদের নিয়ে ঝামেলা নেই। চিন্তা বিবেকবাবুকে নিয়ে। টাকার গরম আছে। মাছ কখনও ওজনে কেনেন না, কেনেন আকারে। তিনি এ ব্যাপারটা বাজারে লক্ষ করেছেন। তাঁর ব্যবসায়ী সত্তা বলে, এ রকম লোক পাল্টি খেতে দু সেকেন্ড সময় নেবে না। তিনি স্বাতীর আগত ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হন। বলেন ম্যাডাম আমরা বরং থানায় জানাই। বিবেকদা একটা এফ আই আর করুন। উনি তো এসব ব্যাপারে এক্সপার্ট।

এক্সপার্ট কথাটার মধ্যে খোঁচা আছে। উচ্চারনের চড়াই উতরাই আছে। বিবেক গুহ দপ করে জ্বলে ওঠে। শালা হারামজাদা। শান্তির সংসারে দেশলাই মারছে।

চারতলার স্বপন রাজাবাজারে পদার্থবিজ্ঞানে গবেষনা করে। বিষয় মহাজাগতিক রশ্মি। স্বাতীর গুনগ্রাহীদের একজন। বাবার বয়স হয়েছে। সেই এসব মিটিং-এ আসে। বুড়োগুলোর ন্যাকামি দেখে তার পরিশীলিত চিত্ত বিচলিত হয়। তার সাম্যবাদী মন কিছুতেই মানতে চায় না এই বুর্জোয়াগুলোর চিড়বিড়ানি। সে আর চুপ করে থাকতে পারে না, বলে, আমরা বোধহয় একটু বাড়াবাড়ি করছি। একজন স্বাধীনচেতা মহিলার ব্যাক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছি।

গুহগিন্নি বিড়বিড় করেন হস্তক্ষেপ না পদক্ষেপ। তিনি রাগে ফোঁস ফোঁস করেন। হাউসিং-এ স্বাতীর যে এত হিতাকাঙ্ক্ষী আছে জানতেন না। সরষের ভেতর ভূত থাকলে তিনি এত অনাচার সামলাবেন কি করে।

তিনি গম্ভির গলায় বলেন, স্বাধীনতার সঙ্গে দায়িত্ববোধও থাকা উচিত। স্বপন ছাড়বার পাত্র নয়। সে মহাব্রহ্মান্ড নিয়ে নাড়াচাড়া করে। সামান্য আশা হাউসিং-এর বায়ুস্তর নিয়ে তার কোনও চিন্তা নেই।

সে নিরীহ গলায় বলে, তবে তো আমাদের অনেকের স্বাধীনতা নিয়েই চিন্তা করতে হয়।

ক্রোধ মানুষের বুদ্ধি হরন করে। গুহ গিন্নিও আন্দাজ করতে পারেন না। তির কোন দিকে যাচ্ছে।

সমরবাবু দুঁদে ব্যবসায়ী। কিছুটা আন্দাজ করেন। মনে মনে স্বপনকে বাহবা দেন।

গুহ গিন্নি বোকার মতো বলে বসেন, কার স্বাধীনতার কথা বলছ? স্বপন আর এক সেকেন্ড সময় নষ্ট করে না, বলে, কেন আমার প্রতিবেশী ডাক্তারবাবু।

গুহগিন্নীর গালের লালিমা কয়েক ডিগ্রি বেড়ে যায়। ডাক্তারবাবুর সাথে পলির একটা সূক্ষ আশনাই আছে। বৃত্তান্তটি আরও সূক্ষতর বায়ুস্তরে যাতায়াত করে। তা আবার প্রথম ধরা পড়ে স্বপনের রেডারে। কর্মক্লান্ত ডাক্তারবাবু মাঝে মাঝে মদ্যপান করে রাতে বাড়ি ফেরেন। বেশ রাতে। সিকিউরিটি তখন গভীর তন্দ্রামগ্ন। এ নিয়ে বিবেকবাবুর কাছে নালিশো হয়েছে, তিনি মিটিয়ে দিয়েছেন। মাঝে মাঝে রাতে তালা খুলে দেবার মহৎ দায়িত্বটি গুহগিন্নিই নিয়েছেন।

স্বপন অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করে। সে জানে রাতের ঘন্টাধ্বনি মানেই ডাক্তারবাবু। একদিন ঘন্টার আওয়াজ শুনে একটু কড়কে দেওয়ার ইচ্ছা হল ডাক্তারবাবুকে। শিতের রাতে আলোয়ানে বুক মুখ ঢেকে সে সিঁড়ির এক কোনে। গুহ গিন্নি তখন সমাজ সেবায় ব্যাস্ত। তালা খুলে দিয়েছেন। ডাক্তারবাবু এক পা এক পা করে এগুচ্ছেন। গুহ গিন্নি নৃত্য শিক্ষিকার মতো ডাক্তারবাবুর তাল ঠিক করছেন। সে এক স্বর্গীয় দৃশ্য। স্বপনও কিঞ্চিত বেসামাল হয়ে পড়ে। গুহগিন্নির সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে যায়। তারপর থেকেই গুহগিন্নি, ডাক্তারবাবু, দুজনেই স্বপনকে একটু বাড়তি খাতির করেন। জাগতিক ব্যাপারস্যাপার ছেড়ে, মহাজাগতিক বিষয়বস্তুর খোঁজ-খবর করেন।

স্বাতীর ব্যাপারটা স্বপন পুরোপুরি জানে। তার প্রচ্ছন্ন সহানুভুতিও আছে। বিবেকদাই তার অতীত জীবন নিয়ে সমস্ত ঘটনা বলেছেন। আর্থিক অনটন, বেঁচে থাকার চেষ্টা, তারপর শেষ চেষ্টা, এই মধুচক্র।

বিবেকবাবু গিন্নির এই গোপন প্রেম অভিসার জানেন না যে তা নয়। গভীর রাতে ঘন্টার মুর্ছনায় তিনি শ্রীকৃষ্ণর কপট নিদ্রার অভিনয় করেন। কারণ স্ত্রীর কাছে স্বাতী উপাখ্যান প্রকাশ হওয়ার পর থেকে এ লুকোচুরি প্রয়োজন আছে। উভয়েই দক্ষ অভিনেতা অভিনেত্রীর মতো পরস্পরের কাছে নৈতিক সমর্থন আদায় করেছেন। কিন্তু সবার সামনে স্বপনের এই অগ্নি আহুতি ভালো লাগে না। তিনি অপমানিত বোধ করেন। কে কত বড় সতী তাঁর জানা আছে। তাও যদি না তিনি স্বাতীকে স্বপনের সাথে দেখতেন। পার্কস্ট্রিটের পানশালায়। কিন্তু ব্যাপারটা জটিল হবার আশঙ্কায় তিনি প্রকাশ করতে পারেননি। এমনকি গিন্নির কাছেও।কারন তার সাথে সেদিন অফিসেরট ঠিকা কম্পিউটার অপারেটার অরুন্ধুতি ছিল। মহিলার রোজকার ঘন্টার হিসাব তাঁকেই দস্তখত করতে হয়। ব্যাপারটা চেপে যাওয়া ছাড়া গতি ছিল না। মিটিং যখন ভেস্তে যাওয়ার মুখে, স্বপন বলল, দেখুন, খুনিকেও হাকিমসাহেব আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেন। আমাদের উচিৎ, মিসেস মিত্রকে মিটিং-এ ডাকা। তাঁর বক্তব্য জানা। বিবেকবাবু, সমরবাবু হাঁ হাঁ করে ওঠেন। গিন্নিরাও ব্যাপারটার মধ্যে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পান।

স্বপন হেসে বলে, তা হলে ব্যাপারটা আমরা কিছুদিন অনুসন্ধান করি, মানে পর্যবেক্ষণ করি। আমি কাকিমাকে বলব, উনি খোলা চোখে ব্যাপারটা নিয়ে ভাবুন। কাকিমা মানে গুহগিন্নি।

কাকিমা শব্দটি গুহগিন্নি ঘৃনা করেন। তিনি লক্ষ করেছেন স্বপন এই শব্দটি ইদানিং ব্যবহার করছে। তাঁর গোপন অভিসার ধরা পড়ার পর থেকে। আগে স্বপন পলিদি বলত। মাঝে মাঝে বৌদি।

পলি প্রাচুর্যে ক্লান্ত। বড় একা। একমাত্র ছেলে দেওঘরে পড়ে। স্বামী না বলতেই শাড়ী, গয়না, প্রসাধনীতে ঘর ভরিয়ে দিয়েছে। এমনকী একটা মারুতিও। শরীরচর্চা, ভিটামিন যুক্ত খাবার, যথেষ্ঠ অবসর। পুরুষের দৃষ্টিতে এখনও তিরিশ। স্বাতী তার স্বামীকে বশ করেছে। তিনি পরাজয় মেনে নিতে পারেন না। ডাক্তারবাবু ও স্বপন দুজনেরই তাঁর উপর আকর্ষন আছে। দুজনকেই তিনি প্রশ্রয় দিয়েছেন। স্বামীর উদাসীনতা, স্বাতীর স্বেচ্ছাচারিতা তাঁকে উৎসাহ দিয়েছে। স্বপনের উপর তাঁর আকর্ষন অনেকটা বন্য, আর ডাক্তার তাঁকে মানষিক প্রশস্তি জোগায়। বিপত্নিক প্রেমিকের কাছে তিনি অনেকটা শোকেসে রাখা হিরের নেকলেস। অনেক যত্ন অনেক মূল্য। দুই বিপরিতমুখী স্রোতে তিনি ঘুর্ণিঝড়ে ঘোরেন।

তাঁর মনে হয়, আজকের আলোচনা সভা স্বাতীর জন্য নয়, কয়েকজন হৃদয়হীন পুরুষের দ্বিচারিতার কথা। ঘর, সংসার, স্ত্রী-পুত্র সহ কিছু শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পুরুষ। শয়ন, ভোজন, রমন, গৃহনির্মাণ সব অনিয়মের ব্যকরণ। তাঁর ঘৃনার তেজ় কমে আসে। একজন অসহায় নারীর প্রতি আর এক রিক্ত হৃদয়ের আর্তি।

দুপুরে পলির সময় কাটে না। স্বাতী তাকে অদৃশ্য চুম্বকে টানে। মনে পড়ে স্বাতীর ডিভোর্সের দিনগুলোর কথা, কত সান্তনা দিয়েছেন। স্বাতী তার হাতে হাত রেখে কত কেঁদেছে। স্বামীকে লুকিয়ে সামান্য অর্থ সাহায্য। সামান্য তরিতরকারি। স্বাতী এসব মনে রাখে। সিঁড়িতে দেখা হলে চোখ নামিয়ে নেয়। যেন পালিয়ে যেতে পারলে বাঁচে। পলি বুঝতে পারে, স্বাতী লজ্জিত। অপরাধী চোখ। পুরুষের কামনার কাছে নারী কত অসহায় সে জানে।

পলি সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে হাজির হয় স্বাতীর ফ্ল্যাটে। কলিং বেল টেপে। কাজের মেয়েটি দরজা খোলে। বোধহয় নতুন। পলিকে চেনে বলে মনে হয় না। দরজা খুলে বলে দিদি বাড়ি নেই। পলি বলে আমি সামনের ফ্ল্যাটে থাকি। দিদিকে ডাকো।

মেয়েটি কি ভেবে বলে, দিদি এখন কাজে। বন্ধু আছে।

আমি এখন বসছি। দিদির সঙ্গে কথা বলব। মেয়েটি কায়দাকানুন সব জানে, কিছুতেই ঢুকতে দেয় না। ঘরের ভেতর থেকে নারী কন্ঠে আওয়াজ আসে - কে রে?

আপনার নাম কী?

বলো পলিদি।

কিছুক্ষন পর পাশের ঘর থেকে স্বাতী বলে, বসতে দে। পলি ঘরে ঢোকে। সুন্দর সুচারু ভাবে সাজানো। দামি সোফা সেট। সেন্টার টেবিল। পাশে এরিকা পামের টব। এক কোনে মা কালীর ছবি। জবা ফুলের মালা দেওয়া। এখনও ঘরে দামি ধুপের গন্ধ। স্বাতীর বর্তমান স্বাচ্ছন্দ্য সে অনুভব করে।

তার অদ্ভুত অনুভুতি আসে। সোফার চামড়ায় হাত বুলোয়। মসৃণ। এখানেই কি তার স্বামী মিলিত হয়? সে এক কোনে সরে বসে। তার নিদ্রা আসে। স্বপ্ন অনুরণিত তরঙ্গে তাকে ভাসায়, কল্পনার সাগরে। পাশের ঘরে স্বাতীর কাজের চিত্র-কল্প ভেসে আসে। অনেক্ষন বসে থাকে। ঘরের দরজা খোলার আওয়াজে সংবিৎ ফিরে আসে।

একজন সৌম্যদর্শন উত্তর-চল্লিশ পুরুষ সামনের চেয়ারে বসে জুতোর ফিতে বাঁধেন দ্রুত বেগে। কোনও দিকে তাকান না। দরজা খুলে বেরিয়ে যান। মনে হয় কোথায় যেন দেখা। একটু যেন চেনা।

স্বাতীর দিকে এই প্রথম তাকায়। বহুদিন পরে চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আকর্ষণীয়া। মুখ, দেহ। লাস্যময়ী ছোঁয়া, পরনে হাউসকোট। একমাথা চুল কোমর পর্যন্ত। যে কোনও পুরুষের বিভ্রান্তির জন্য যথেষ্ট।

স্বাতী তাকে জড়িয়ে ধরে। কান্নায় ভেঙে পড়ে। পলি নিরবে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। স্বাতী ধরা গলায় বলে, পলিদি আমাকে ক্ষমা করো, আমার কোনও দোষ নেই। পলি নিরবে হাসে, বলে, আমি জানি, বিবেককে আমি খুব ভালো করে জানি, তোর ওপর আমার কোনও রাগ নেই।

পলি দুপুর হলে ছটফট করে। কী এক অচেনা আকর্ষণ তাকে এক পা এক পা করে নিয়ে যায় স্বাতীর ফ্ল্যাটে। সে স্বামীকেও বলেনি স্বাতীর সাথে বন্ধুত্বের পুনর্নবীকরণের কথা।

স্বাতী গল্প করছে। হাউসিং-এর পুরুষদের কথা। ছেলে বুড়ো সব। তার গুণগ্রাহী। স্বাতী প্রথমে চেষ্টা করেছে এদের স্পর্শ বাঁচিয়ে চলতে। সে বাড়ির দুর্নাম চায়নি কোনওদিন।

শৈবাল তাকে ভালবাসে অন্ধের মতো। সেও ভালবাসে। কিন্তু চায়না তার সংসার ভেঙে যাক। শৈবালের ভালবাসার টানা-পোড়েনে সে বিক্ষত।

এখানে পলির বেশ কয়েকজন নতুন বান্ধবী হয়েছে। কলেজ ছাত্রী, গৃহবধূ, শিক্ষিকা। চাঁচা ভুরু, দৃশ্যমান শরীর রোমশূন্য। পলি ভাবে এরা কি সবাই লেডি চ্যাটার্লি। স্বাতী ভুল ভেঙে দিয়েছে, না। কারও বাড়ি তৈরির কিস্তি বাকি। ব্যাংক গুন্ডা পাঠিয়েচছে। কারও সন্তান ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে, স্বামীর সীমিত আয়ে চলে না। কারও স্বামী মদ্যপ, সব টাকা নেশায় ঢুকে যায়। ছাত্রীদের সমস্যা অন্য, পার্লারের খরচ, নতুন চুড়িদার, নাচঘরে প্রথম অভিযান। দু-একজন লেডি চ্যাটার্লি আছেন। যেমন মিসেস সরকার, উত্তর-চল্লিশ বলিষ্ঠা মহিলা। উনি খুশ থাকলে আর কলেজের ছাত্র পেলে বিনা পারিশ্রমিকেও কার্য করেন।

শীততাপনিয়ন্ত্রিত ঘরে পলি মাঝে মাঝে উত্তাল হয়ে ওঠে। অচেনা অজানা জগতের অনাহূত অতিথি হিসেবে শরীর কাঁপে। সারা দেহ ঘামে। এ কি শুধুই নিঃসঙ্গতা, স্বামীর উদাসীনতা। সে নিজেও উত্তর খুঁজে পায় না। একদিন মিসেস সরকার বলেন, পলি তুমি এখানে শুধু শুধু আসো কেন? সময় কাটে না? পলি উত্তর দেয় না। অবিরাম হাত কচলে যায়।

কী আগুন পোয়াতে আসো?

পলি অস্ফুট স্বরে কিছু বলে। দুঃখ, কম্পন, বেদনা মেশানো কিছু শব্দ।

তুমি এত সুন্দরী, হাউসিং-এ তোমার এত গুণগ্রাহী, তোমার কিসের দুঃখ?

পলি রেগে যায়। বলে, না স্বাতী আমার বন্ধু। দুপুরে বড় একা লাগে, তাই আসি।

আমাদেরও বন্ধু, অবশ্য কাজের।

পলির লালিমা গাঢ় থেকে গাঢ়তম হয়। যেন হাতেনাতে ধরা পড়ে যায়।

স্বাতী বাঁচিয়ে দেয়। মিসেস সরকারকে বলে, এরকম বোলো না, পলিদি খুব ভালো মানুষ। সে সময় আমাকে সাহায্য না করলে কোথায় ভেসে যেতে হত।

মিসেস সরকার বলেন, চলো পলি আমরা দুজন ভাসি। নৃত্যের তালে তালে। পলি ছুটে ঘর থেকে পালায়। নিজের ফ্ল্যাটে গিয়ে হাত মুখ ঠান্ডা জলে ধোয়, চোখ বুজে বিছানায় শুয়ে পড়ে। গহনে যে কী বার্তা আছে, তাকে নিয়ে যায় কয়েকজন মোহিনীর কাছে। বারবার।

সে প্রতিজ্ঞা করে আর কোনও দিন যাবে না স্বাতীর কাছে। দু-তিন দিন সত্যিই যায় না। কিন্তু চার দিনের দিন ড্রাগের নেশার মতো হাজির হয় ওর দরজার সামনে। যেন নিশিতে পেয়েছে। স্বাতী দরজা খুলে দেয়। হাত ধরে বসায় সোফায়। উদ্বিগ্ন গলায় বলে, পলিদি শরীর খারাপ? মুখ এত শুকনো কেন? পলি জবাব দেয় না। দু হাতে মুখ ঢেকে অঝোরে কাঁদে। স্বাতী কিছু বলতে চায়। ইতস্তত করে।

পলিদি একটা কথা বলব? যদি কিছু না মনে করো।

কী কথা?

আমি বলব কি না বুঝতে পারছি না। তুমি কীভাবে নেবে।

তুমি বলো, তুমি বলো। আমি কিছু মনে করব না।

এক ভদ্রলোক তোমার কথা বলছিলেন। আলাপ করতে চান।

পলি অবাক চোখে বলে কে ভদ্রলোক?

সেই প্রথম তুমি যেদিন এসেছিলে। ভদ্রলোক জুতোর ফিতে বাঁধছিলেন, উনি রোডস-এর বড় ইঞ্জিনিয়ার। আমাদের সেক্রেটারির বন্ধু, ভালো পেমেন্ট দেন।

পলি স্তব্ধ হয়ে যায়। তার যথেষ্ট প্রাচুর্য আছে। কীসের অভাব। দুজন গুণগ্রাহীও আছে। তবু বুকের খাঁচায় কেন এত তোলপাড়। হৃৎপিণ্ড আহত চিতার মত এক কোণে কামড়ায়। সে ঘৃণা করে পুরুষদের। তাদের বিশ্বাস ভঙ্গে সে মর্মাহত। স্বামী, ডাক্তার, স্বপন, তামাম দুনিয়ার পুরুষ পলির মোহিনী রূপে মুগ্ধ। নীলকন্ঠ। শুধুই কি শরীর, কোথায় ভালবাসা। কোথায় গেল সে শৈশবের পাখিরা, দোয়েল, শালিক, টিয়া। দুপুরে অহর্নিশি ফেরিওয়ালা হাঁক। ভালবাসা কি এদের সঙ্গেই পালিয়ে গেল। আমাদের কি কোনও হৃদয় থাকতে নেই। ভালবাসা থাকতে নেই। নিরালা দুপুরে বালিশ কি ভেজে না? তবু ওরা পণ্য ভাবে। মরা ভেটকি বা শীতে নতুন আলু, মূল্য যা-ই হোক না কেন।

সেই শুরু। প্রথমে স্বাতীর কাছে কলাবিদ্যায় শিক্ষানবিশি। তারপর হপ্তায় দু-চারদিন স্বাধীন পক্ষিণী। দুপুরে। খুব সাবধানে। প্রতিহিংসা, ঘৃণা, কামনা। সে নিজেওটঠিক উত্তর পায় না। হয়তো সব কিছুর নির্যাস। দুনিয়ার সব পুরুষই এক। শিক্ষিত, অশিক্ষিত, ধনী, দরিদ্র, সব এক। সারমেয়। চারপেয়ে ভাদুরে জন্তু। এখন আর বিবেক দংশন করে না। বরং পুরুষের সেবা তার ভালোই লাগে। ওদের মিথ্যার ফুলঝুরি শুনে হাসি পায়। চাটুকারিতায় মনে হয় মক্ষীরানি।

সেক্রেটারি স্বাতীকে সাবধান করে দেন। বিপদ আসতে পারে। উনি পলির ব্যাপারটাও জানেন। চিফ ইঞ্জিনিয়ার বলেছে। কোথাকার জল কোথায় গড়িয়েছে। কোনও কেলেঙ্কারি যেন না হয়। উনি সামলাতে পারবেন না। হাউসিং-এর অধিকাংশ মানুষই এককাট্টা অনাচার বন্ধ করো। ধরা পড়লে কিছু করার নেই। এতগুলো টি ভি চ্যানেল।

চার
দিন দিন ব্যাবসার শ্রীবৃদ্ধি হচ্ছে। আজ গোয়া কাল মুম্বাই। প্রায়ই বলে, ছেড়ে দেব। তারপর শুধু তুমি আর আমি। আমিও বসে আছি সেই কুয়াশাচ্ছন্ন তুমি আমি যুগের আশায়।

গুহগিন্নীর গোপন অভিসার আখ্যান আমার অজানা নয়। মনে হয় বিবেকদাও জানেন। কিন্তু কিছু করার নেই। দাঁতে দাঁত চেপে অপেক্ষা করতে হয়। এতে আমার হালকা মানসিক তৃপ্তি আছে। কিছুটা প্রতিহিংসাজনিত। রহস্যময় রূপকে বুঝিয়ে দিই, কেমন দিলাম।

সেদিন স্বাতী আসতে বলল। টিভি খারাপ। দেখতে হবে। এ ভুবনে আমার মতো খিদমতগার আর কে আছে। এ যেন মনিবিনির আদেশ। আমিও একপায়ে রাজি।

বেল টিপতে মিসেস সরকার দরজা খুলে দেন। সাত সকালেই মুখে ঘন প্রসাধনীর প্রলেপ। লিকারের মৃদু গন্ধ। স্বাতী বলেছে টিভিটা দেখতে। আমি বললাম, স্বাতী কোথায়? প্রশ্ন করে নিজেই অপ্রস্তুত হয়ে যাই। যেন একটু অপমানিত হই। জানা ব্যাপার। তবু নিজেকে পুরুষ বলতে লজ্জা লাগে। এ যেন পুতুল খেলা। মহারাণী আর প্রজা।

কী হল। আমাকে ভাল লাগে না বুঝি। মুখে একগাল মিচকে হাসি।

মিসেস সরকারের জীবনপঞ্জি আমার জানা। ছলাকলায় বাৎস্যায়ান গুলে খেয়েছেন। তবে মনটা ভাল। কাউকে ভাল লাগলে আর্থিক সাহায্যও করেন।

না, আর না। এই শেষ। ছাপোষা কেরানি। বেঁচে থাক আমার অফিস, ক্লাব, নাটক, লাইব্রেরি, টুকটাক মেরামতের কাজ। খারাপ কী। আমার জায়গায় আর একটা মোরগকে বসিয়ে যাব। অফিসের প্রদীপ। ফেশিয়াল করে। ঘাড়ে পাউডার মাখে। মুখে দাড়ি গোঁফ কম। থিয়েটারের নায়িকাকে মুফতে মোগলাই মাংস খাওয়ায়। অফিস ক্যান্টিনে।

পিকচার টিউব গেছে। হাজার পাঁচেকের ধাক্কা। অর্ধেক মাইনে। যদিও স্বাতীর ক্ষমতা আছে। তবু চটির পেরেকের মতো খিচখিচ করে। গত মাসেই ও একটা ঘড়ি দিয়েছে। এ মাসে আমার পালা। আমি তো স্বাতী নই। এখনও নৈতিকতা হারাইনি।

মিসেস সরকার সামনের সোফায় বসে। অবিরাম পায়ের দুলুনি দেখি। পায়ের গোছ থেকে শাড়ি দু ইঞ্চি ওপরে। এক জোড়া রূপোর নূপুর। ঝুমঝুম করে আমন্ত্রণের সুরে বাজছে। হ্যামলিনের বাঁশির সুরে বাজিয়ে যাচ্ছেন সুডৌল পদযুগল। বেশ টের পাচ্ছি উত্তেজনার পারদ। উনি তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন ছাগশিশুর ছটফটানি। কামনার কাছে পুরুষের চিরন্তন পরাজয়। বিস্রস্ত বসনা নারীর মাদক আবেদনে আমি নিস্তব্ধ বিস্ফোরক। টুকরো পাথর ঘর্ষণের অপেক্ষায়।

হঠাৎ দরজায় দমাদ্দম ধাক্কা। মিসেস সরকার উঠে দাঁড়ান। রঙ্গিণী রূপ এক লহমায় পাল্টে যায়। যেন নেহাতই এক সাধারণ নারী। ভয়ার্ত চেহারা। অসহায় চাহনি। স্বাতী ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। এলোমেলো পোষাক। চিফ ইঞ্জিনিয়ার পোষাক সামলাতে ব্যস্ত। দুজন নারী ঠিক যেমন দৈনন্দিন অফিস, আদালত, দোকান বাজারে দেখি। হিংস্র শ্বাপদের সামনে দুটি অসহায় হরিণী।

সশব্দে দরজা ভেঙে পড়ে। চার-পাঁচজন পুলিশ। পেছনে ক্যামেরা হাতে টিভি ক্রু। বিবেকদা, ডাক্তারবাবু, স্বপন আরও অনেক।

মহিলা সাংবাদিক ধারাভাষ্য দিয়ে চলেছেন। ঝড়ের গতিতে। দরজা, জানলা, মদের গেলাস, আকাশের রং।

কসবায় আবার মধুচক্রের আসর। দু-জন মহিলা সহ দুজন পুরুষ ধরা পড়লেন। পুলিশের কাছে কিছুদিন ধরে অভিযোগ আসছিল। সেই অনুযায়ী নজর রাখা হয়েছিল। আজ হাতে নাতে ধরা হল। ফ্ল্যাটের মালিক স্বাতী মিত্র। মহিলা ডিভর্সী ও প্রসাধনী ব্যবসার আড়ালে মধুচক্র চালাতেন। আসুন দেখা যাক এখানকার বাসিন্দারা কী বলেন।

আপনার নাম?

আমি পলি গুহ, উল্টো দিকে থাকি।

আপনি কি জানতেন, এখানে দেহ ব্যবসা চলছে?

হ্যাঁ আন্দাজ করতাম। এই মেয়েটা পরিবেশ বিষিয়ে তুলেছিল।

আপনারা প্রতিবাদ করেননি?

আমার স্বামী বহুবার প্রতিবাদ করেছেন।

আপনি কী করেন? সাংবাদিক মাইক ডাক্তারবাবুর সামনে ধরেন।

আমি ডাক্তার।

আপনি খবর রাখতেন?

রাখতাম মানে খবর ছিল, কিন্তু মহিলা যে তলে তলে মধুচক্র চালাচ্ছেন স্বপ্নেও ভাবিনি। আমি জানতাম মহিলা প্রসাধনীর ব্যবসা করেন। এখানকার মহিলাদের সেলস গার্ল ভাবতাম।

স্বপনের মনে হল, কিছু বলা উচিত। সে ভিড় ঠেলে এগিয়ে আসে। বলে, মহিলা ভেষজ ক্রিমের ব্যবসা করেন। মাঝে মাঝে পার্টি দেন। ব্যবসার স্বার্থে। আমিও দু-চারবার পার্টিতে এসেছি। মদ্যপানও করেছে। এ বাড়ির দু-চারজনেও যোগ দিয়েছে।

গুহ সাহেবের রক্তচাপ তখন হিমাঙ্কের দিকে। তিনি স্বপনকে ভয় করেন। পাছে বেফাঁস কিছু বলে দেয়। তিনি স্বপনকে ঠেলে মাইকের সামনে আসেন। বলেন, দেখুন আমরা সবাই ছাপোষা মানুষ। যে যার কাজ করি। সময় কোথা দিয়ে চলে যায় খোঁজ রাখি না। যা বলার আমাদের সেক্রেটারি সমরবাবু বলবেন। উনি মাইকটা ঠেলে সমরবাবুর দিকে ধরিয়ে দেন।

দেখুন, এ বাড়িতে একগাদা স্কুল কলেজের ছেলেমেয়ে। তারাই বা কী শিখবে। আমরাই বা নৈতিকতার কী শিক্ষা দেব।

আমি শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। রোজগার চেনা মুখগুলো মনে হয়, সারি সারি নরমুণ্ড, ঘৃণার ছেঁড়া পাতা।

সাংবাদিক মাইকটা হঠাৎ আমার সামনে ধরেন।

আপনি কী করেন?

আমি টিভি মেকানিক। আমতা আমতা করি।

মানে, আপনি টিভি সারাতে এসেছিলেন? বলে স্বাতীর দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে চায়। স্বাতী নীরবে ঘাড় নাড়ে। ভিড়ের মধ্যে থেকে বিবেকদা বলে ওঠেন।

হ্যাঁ হ্যাঁ আমি চিনি। আমার বাড়ির টিভির কাজও উনি করেন।

স্বপন বলে, আমার বাড়ির কাজও করেন। অফিসার আমার দিকে আড় চোখে তাকান। বুক ভরে দম নিই। মুক্তি এত সুন্দর জানতাম না। ভালোবাসা এত বেদনার জানতাম না। যন্ত্রণার শেষ সীমায় এসে সব যন্ত্রণা ক্ষমতা হারায়। সেই সীমাহীন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এর মাঝে স্বাতী নামের ডিঙাটিকে আমি আঁকড়ে ধরলাম। স্বাতী হাত ধরে তুলে নিল। ছোট্ট ভঙ্গিতে আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিয় গেল।

বিবেকদা মুচকি হাসিতে জানালেন কেমন দিলাম?

সমাপ্ত