অমরত্মের প্রত্যাশা নেই নেই কোন দাবি দাওয়া
এই নস্সর জীবনের মানে শুধু তোমাকে চাওয়া
মুহূর্ত যায় জন্মের মতো অন্ধ জাতিস্মর
গত জন্মের ভুলে যাওয়া স্মৃতি বিস্মৃত অক্ষর
ছেড়া তাল পাতা পুঁথির পাতায় নিঃস্বাস ফেলে হাওয়া
এই নস্সর জীবনের মানে শুধু তোমাকেই চাওয়া
কাল-কেউটের ফনায় নাচছে লখিন্দরের স্মৃতি
বেহুলা কখনো বিধবা হয় না এটা বাংলার রীতি
ভেসে যায় ভেলা এবেলা ওবেলা একই সব দেহ নিয়ে
আগেও মরেছি আবার মরবো প্রেমের দিব্যি দিয়ে
জন্মেছি আমি আগেও অনেক মরেছি তোমারই কোলে
মুক্তি পাইনি শুধু তোমাকে আবার দেখবো বলে
বার বার ফিরে এসেছি আমরা এই পৃথিবীর টানে
কখনো গাঙড় কখনো কো পাই কপোতাক্ষর গানে
গাঙড় হয়েছে কখনো কাবেড়ি কখনো বা মিসিসিপি
কখনো রাইন কখনো কঙ্গো নদীদের স্বরলিপি
স্বরলিপি আমি আগেও লিখিনি এখনও লিখিনা তাই
মুখে মুখে ফেরা মানুষের গানে শুধু তোমাকেই চাই
তোমাকে চেয়েছি ছিলাম যখন অনেক জন্ম আগে
তথা গততার নিঃস্বংগতা দিলেম অস্তরাগে
তারই করুনায় ভিখারিনি তুমি হয়েছিলে একা একা
আমিও কাঙাল হলাম আরেক কাঙালের পেয়ে দেখা
নতজানু হয়ে ছিলাম তখন এখনো যেমন আছি
মাধুকরী হও নয়নমোহিনী স্বপ্নের কাছাকাছি
ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ব্যারিকেড কর প্রেমের পদ্যটাই
বিদ্রোহ আর চুমুর দিব্যি শুধু তোমাকেই চাই
আমার স্বপ্নে বিভোর হয়েই জন্মেছ বহুবার
আমি ছিলাম তোমার কামনা বিদ্রোহ চিৎকার
দুঃখ পেয়েছ যতবার জেনো আমায় পেয়েছ তুমি
আমি তোমার পুরুষ আমি তোমার জন্মভূমি
যতবার তুমি জননী হয়েছ ততবার আমি পিতা
কতো সন্তান জ্বালালো প্রেয়সি তোমার আমার চিতা
বার বার আসি আমরা দুজন বার বার ফিরে যাই
আবার আসবো আবার বলবো শুধু তোমাকে চাই-
বার বার আসি আমরা দুজন বার বার ফিরে যাই
আবার আসবো আবার বলবো শুধু তোমাকে চাই।
সমাপ্ত
Thursday, February 3, 2011
জাতিস্মর
বাঁশুরিয়া
বাঁশুরিয়া বাজাও বাঁশী দেখি না তোমায়
গেয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়-
বাঁশুরিয়া বাজাও বাঁশী দেখি না তোমায়
গেয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়।
এ শহরে এসছো তুমি কবে কোন রাজ্য থেকে-
এ শহরে এসছো তুমি কবে কোন রাজ্য থেকে
তোমাদের দেশে বুঝি সব মানুষই বাঁশী শেখে
আমাদের স্কুল কলেজে শেখে লোকে লেখা পড়া-
আমাদের স্কুল কলেজে শেখে লোকে লেখা পড়া
প্রাণে গান নাই মিছে তাই রবি ঠাকুর মূর্তি গড়া
তোমার ঐ দেহাতি গান,
তোমার ঐ দেহাতি গান, দোলে যখন বাঁশির মুখে
আমাদের নকল ভণ্ড কৃষ্টি চালায় করাত বুকে
বুকে আর গলায় আমার শহর কোলকাতায়
গেয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়
বাঁশুরিয়া বাজাও বাঁশী দেখি না তোমায়
গেয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়।
ঠেলা ভ্যান চালাও,
ঠেলা ভ্যান চালাও, তুমি কিম্বা ভাড়া গাড়ির ক্লিনার
কবছরে একবার যাও তোমার দেশের নদীর কিনার
ফাঁক পেলে বাঁশী বাজাও,
ফাঁক পেলে বাঁশী বাজাও, ফেলে আসা ঘরের ডাকে
দেশে গিয়ে এমন সুরে হয়তো ডাকো কোলকাতাকে
ফিরে এসে উদাম খাটো,
ফিরে এসে উদাম খাটো, গায়ে গতরে ব্যস্ত হাতে
মজুরিতে ভাগ বসাচ্ছে কারা তোমার কোলকাতাতে
তাদেরই গাইয়ে আমি সাজানো জলসায়
গেয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়
বাঁশুরিয়া, বাঁশুরিয়া বাজাও বাঁশী দেখি না তোমায়
গেয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়-
গেয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়-
গেয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়।
সমাপ্ত
পেটকাটি চাঁদিয়াল
পেটকাটি চাঁদিয়াল…
পেটকাটি চাঁদিয়াল মোমবাতি বগ্গা
আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক, মাটিতে অবজ্ঞা-
পেটকাটি চাঁদিয়াল মোমবাতি বগ্গা
আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক, মাটিতে অবজ্ঞা।
বয়স বারো কি তেরো,
বয়স বারো কি তেরো, রিকশা চালাচ্ছে
আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক ছেলেটাকে ডাকছে।
বয়স বারো কি তেরো, বড়জোর চোদ্দ
রিক্শা চালাতে শিখে নিয়েছে সে সদ্য।
ছেলেটার মন নেই প্যাডেলে বা চাক্কায়
ঐ তো লেগেছে প্যাঁচ চাঁদিয়াল বগ্গায়।
শান্ দেওয়া মানজায়, বগ্গা ভো কাট্টা
ছেলেটা চেঁচিয়ে ওঠে “এই নিয়ে আটটা”।
সওয়ার বাবুটি ভাবে, দেরি হয়ে যাচ্ছে
বিচ্ছু ছোঁড়াটা বড় আস্তে চালাচ্ছে।
“ওই ছোঁড়া, আরে ওই ছোঁড়া মলে যা
আট্টা তো তোর কি?”
সওয়ার বাবুটি দেন রেগে মেগে হুমকি।
বাবুর খ্যাঁকানি শুনে সম্বিত্ ফিরে পায়
ছেলেটা যে করে হোক রিক্শা চালিয়ে যায়।
এ কিশোর পারবে কি এই বোঝা টানতে?
এই বাবু কোনো দিন পারবে কি জানতে?
এ কিশোর পারবে কি এই বোঝা টানতে?
এই বাবু কোনো দিন পারবে কি জানতে?
যে ছেলেটা প্রাণপণে রিক্শা চালাচ্ছে
মুক্তির ঘুড়ি তাকে খবর পাঠাচ্ছে।
পেটকাটি চাঁদিয়াল মোমবাতি বগ্গা
আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক, মাটিতে অবজ্ঞা।
পেটকাটি চাঁদিয়াল…মোমবাতি বগ্গা
সমাপ্ত
তোমাকে চাই
প্রথমত: আমি তোমাকে চাই
দ্বিতীয়ত: আমি তোমাকে চাই
তৃতীয়ত: আমি তোমাকে চাই
শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই
নিঝুম অন্ধকারে তোমাকে চাই
রাতভোর হলে আমি তোমাকে চাই
সকালের কৈশোরে তোমাকে চাই
সন্ধের অবকাশে তোমাকে চাই
বৈশাখী ঝড়ে আমি তোমাকে চাই
আষাঢ়ের মেঘে আমি তোমাকে চাই
শ্রাবণে শ্রাবণে আমি তোমাকে চাই
অকালবোধনে আমি তোমাকে চাই।
কবেকার কলকাতা শহরের পথে
পুরোনো নতুন মুখ ঘরে ইমারতে
অগুন্তি মানুষের ক্লান্ত মিছিলে
অচেনা ছুটির ছোঁয়া তুমি এনে দিলে
নাগরিক ক্লান্তিতে তোমাকে চাই
এক ফোঁটা শান্তিতে তোমাকে চাই
বহুদূর হেঁটে এসে তোমাকে চাই
এ জীবন ভালোবেসে তোমাকে চাই।
চৌরাস্তার মোড়ে পার্কে দোকানে
শহরে গঞ্জে গ্রামে এখানে ওখানে
স্টেশন টার্মিনাস ঘাটে বন্দরে
অচেনা ড্রয়িংরুমে চেনা অন্দরে
বালিশ তোশক কাঁথা পুরোনো চাদরে
ঠান্ডা শীতের রাতে লেপের আদরে
কড়িকাঠে চৌকাঠে মাদুরে পাপোশে
হাসি রাগ অভিমানে ঝগড়া আপোসে
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই-
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই
ডাইনে ও বাঁয়ে আমি তোমাকে চাই
দেখা না দেখায় আমি তোমাকে চাই
না-বলা কথায় আমি তোমাকে চাই।
শীর্ষেন্দুর কোন নতুন নভেলে
হঠাৎ পড়তে বসা আবোলতাবোলে
অবোধ্য কবিতায় ঠুংরি খেয়ালে
স্লোগানে স্লোগানে ঢাকা দেয়ালে দেয়ালে
সলিল চৌধুরীর ফেলে আসা গানে
চৌরাশিয়ার বাঁশি মুখরিত প্রাণে
ভুলে যাওয়া হিমাংশু দত্তর সুরে
সেই কবেকার অনুরোধের আসরে
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই-
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
অনুরোধে মিনতিতে তোমাকে চাই
বেদনার আর্তিতে তোমাকে চাই
দাবীদাওয়া চাহিদায় তোমাকে চাই
লজ্জাদ্বিধায় আমি তোমাকে চাই।
অধিকার বুঝে নেওয়া প্রখর দাবীতে
সারারাত জেগে আঁকা লড়াকু ছবিতে
ছিপছিপে কবিতার ছন্দে ভাষায়
গদ্যের যুক্তিতে বাঁচার আশায়
শ্রেণীহীন সমাজের চির বাসনায়
দিনবদলের খিদে ভরা চেতনায়
দ্বিধাদ্বন্দের দিন ঘোচার স্বপ্নে
সাম্যবাদের গান ঘুমে জাগরণে
বিক্ষোভে বিপ্লবে তোমাকে চাই
ভীষণ অসম্ভবে তোমাকে চাই
শান্তি অশান্তিতে তোমাকে চাই
এই বিভ্রান্তিতে তোমাকে চাই
প্রথমত: আমি তোমাকে চাই
দ্বিতীয়ত: আমি তোমাকে চাই
তৃতীয়ত: আমি তোমাকে চাই
শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই।
সমাপ্ত
আমার দুবাহু প্রসারিত করে
লা লা লা-লা লা লা-লা লা লা-লা লা লা
আমার দুবাহু প্রসারিত করে সূর্যের কোন অঞ্চলে-
আমার দুবাহু প্রসারিত করে সূর্যের কোন অঞ্চলে
পাক খেয়ে নেচে অবশেষে এই শ্বেতাঙ্গ দিন শেষ হলে
শান্ত, শীতল সন্ধ্যে,
শান্ত, শীতল সন্ধ্যে, তন্বী গাছের ছায়াই ভালো
রাত্রি নামবে যখন, আহা, আমার মতো কালো, কালো, কালো৷
আমার দুবাহু প্রসারিত করে সূর্যের কোন অঞ্চলে
লা লা লা-লা লা লা-লা লা লা-লা লা লা
আমার দুবাহু প্রসারিত করে সূর্যের মুখে মুখে-
আমার দুবাহু প্রসারিত করে সূর্যের মুখে মুখে
নাচ ঘুরপাক দুরন্ত এই দিন গেলে শেষে চুকে
শান্ত, ধূসর সন্ধ্যে,
শান্ত, ধূসর সন্ধ্যে, আহা তন্বী সে এক গাছ
রাত্রি নেমেছে আমার মতো, কালোর চলেছে নাচ, নাচ৷
আমার দুবাহু প্রসারিত করে সূর্যের কোন অঞ্চলে
লা লা লা-লা লা লা-লা লা লা-লা লা লা
আমার দুবাহু প্রসারিত করে সূর্যের মুখে মুখে-
আমার দুবাহু প্রসারিত করে সূর্যের মুখে মুখে
নাচ ঘুরপাক দুরন্ত এই দিন গেলে শেষে চুকে
শান্ত, ধূসর সন্ধ্যে,
শান্ত, ধূসর সন্ধ্যে, আহা তন্বী সে এক গাছ
রাত্রি নেমেছে আমার মতো, কালোর চলেছে নাচ, নাচ৷
আমার দুবাহু প্রসারিত করে সূর্যের কোন অঞ্চলে-
আমার দুবাহু প্রসারিত করে সূর্যের কোন অঞ্চলে
পাক খেয়ে নেচে অবশেষে এই শ্বেতাঙ্গ দিন শেষ হলে
শান্ত, শীতল সন্ধ্যে
শান্ত, শীতল সন্ধ্যে তন্বী গাছের ছায়াই ভালো
রাত্রি নামবে যখন, আহা, আমার মতন কালো, কালো, কালো৷
সমাপ্ত